July 31, 2025, 3:31 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে অংশ নিয়ে হাজারো শিক্ষার্থী সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসে। এসময় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তারা প্রশাসন ভবনে ঢুকে কর্মকর্তাদের বের বরে দিয়ে অফিসগুলোতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সাজিদের মরদেহ ভেসে থাকতে দেখার পর দীর্ঘ সময়েও প্রশাসন, পুলিশ বা চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছায়নি। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই থানা থাকলেও মরদেহ উদ্ধারে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। এমনকি আধাঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও ঘটনাস্থলে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা চিকিৎসক উপস্থিত হননি। পরে বাধ্য হয়ে স্থানীয় একটি ভ্যানে করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে মরদেহ নেওয়া হয়।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আরও জানান, মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা—প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্ট—ঘটনাস্থলে আসেননি। এছাড়া তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর কোথাও সিসিটিভি ক্যামেরা কার্যকর নেই, ফলে সাজিদ কোথায় গিয়েছিল, কীভাবে তার মৃত্যু হলো, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য মিলছে না।
শিক্ষার্থীরা একই সাথে ছয় দফা দাবি দিয়েছে। এগুলো হলো মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও প্রকাশ্য রিপোর্ট, ক্যাম্পাসজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও সক্রিয় করা, আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ-প্রস্থান শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা, পুরো ক্যাম্পাস ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত ও সক্রিয় স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও বহিরাগতদের অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, এসব দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে যাবেন। তারা প্রশাসনের ওপর অনাস্থা জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা নৈতিক নয়।
এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, যেমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়নসহ আরও অনেকে। আন্দোলনের শুরুতে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে নিহত শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হন।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট/
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে এক শিক্ষার্থী সাজিদের মরদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে। সাজিদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। শিক্ষার্থীদের দাবি, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে কোনো গোপন রহস্য রয়েছে—যা দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে উন্মোচন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে আন্দোলন ও উত্তেজনার প্রেক্ষিতে তারা জরুরি বৈঠকে বসেছে বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে তারা দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করছেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং পরিস্থিতি নজরে রাখছে স্থানীয় প্রশাসন।
Leave a Reply